Site icon Kitabbhubon

তোমাকে ভালবাসী হে নবী (1)

তোমাকে ভালবাসি হে নবী

তোমাকে ভালবাসি হে নবী

তোমাকে ভালবাসী হে নবী । ইনশাআল্লাহ! আমরা ধারাবাহিক বইটি সাইটে প্রকাশ করার উদ্যোগ নিয়েছি। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন।

শুরুতে বইয়ের পরিচিতি দেওয়া হল:

তোমাকে ভালবাসি হে নবী
অনুবাদ:
মাওলানা আবু তাহের মিছবাহ
(শিক্ষক, আরবী ভাষা ও সাহিত্য
মাদরাসাতুল মাদীনাহ, আশরাফাবাদ)
মূল লেখক:
গুরুদত্ত সিং
বার, এট ল’ এডভোকেট, (লাহোর হাইকোর্ট)
প্রকাশনায়:
দারুল কলম
আশরাফাবাদ, লালবাগ, ঢাকা – ১৩১০

হৃদয়ের আকুতি

সত্যের আলো ছড়াতে, পুণ্যের পথ দেখাতে এক মহামানবের আবির্ভাব হলো । তার শুভ দর্শনে দৃষ্টি যাদের প্রেমমুগ্ধ হলো এবং হৃদয় যাদের ভালবাসায় স্নিগ্ধ হলো জনম তাদের সার্থক হলো, জীবন-স্বপ্ন তাদের সফল হলো । এ পরশমণির পরশ-সৌভাগ্য যারা লাভ করলো, খাটি সোনার চেয়ে খাটি তারা হলো । এ স্বর্গ-পুষ্পের সান্নিধ্য-সৌরভ যারা পেলো বিশ্ব-বাগানে তারা গোলাবের খোশবু ছড়ালো।

উষর মরুর বাসিন্দা হে উন্মি আরব! জানি না; মর্তলোকের মানব, না স্বর্ণলোকের দেবতা তোমরা! হাবীবে খোদার দীদার-দর্শন পেলে কোন্ সে মহাগুণে! নূরে খোদার তাজাল্লিতে ধন্য হলে কোন্ সে মহাপুণ্যে!! ইতিহাস তো বলে, লুটতরাজ ও খুনখারাবি ছিলো তোমাদের পেশা, আর নাচ-গান ও মদ-জুয়া ছিলো তোমাদের নেশা । এমন কোন অন্যায় ছিলো না যা তোমরা জানতে না, এমন কোন পাপও ছিলো না যা তোমরা করতে না। আকারে ইনসান, প্রকারে শয়তান এই তো ছিলো তোমাদের পহচান। অথচ সারা বিশ্বে আজ তোমাদেরই জয়গান, তোমাদেরই শওকত-শান!

বলো না কোন্ সে প্রতিভা সুপ্ত ছিলো তোমাদের মাঝে, কোন সে অমৃতজলের সন্ধান ছিলো তোমাদের কাছে, যার ফলে তোমাদের জীবনে হলো নব প্রাণের সঞ্চার এবং চরিত্রে এলো এমন মহাবিপ্লব, সময়ের মুহুর্ত ব্যবধানে রাহজান থেকে হয়ে গেলে রাহবার!

কাফেলা লুন্ঠনকারী এই তোমাদের কাছেই বিভ্রান্ত মানব কাফেলা পথের দিশা পেলো! মুক্তির মহাসড়কে পথচলা শিখলো! মহাবিশ্বের মহাবিম্ময়ও যে হার মানে তোমাদের কাছে!

হে বালু সাগরের ‘আরবিস্তান’! বিশ্ব মানচিত্রে একদা তুমি এমনই অখ্যাত অবজ্ঞাত ছিলে যে, সভ্য জগত জানতো না, আরব নামের কোন দেশ আছে, আর সেখানে মানুষের সমাবেশ আছে, অথচ বিশ্ব-জাতি আজ তাকিয়ে আছে তোমার পানে কী বিপুল বিস্ময় নিয়ে! তোমার প্রেমে কাতর নয় কোন্ সে মন! তোমার দর্শন-পিপাসু নয় কোন্ সে নয়ন! এবং তোমার আশীর্বাদের ভিখারী নয় কোন্ সে রাজা! কোন্ সে রাজ্য!

হাবীবে খোদার পদধূলি, নূরে খোদার তাজাল্লি তোমাকে দিয়েছে নব জীবনের নব সাজ। তাই মানব সভ্যতার মুকুট তুমি আজ। সর্বদেশের ঈর্ষা, সর্বজাতির শ্রদ্ধা এখন লুটিয়ে পড়ে তোমারই পায়ে, সুতরাং গর্ব করা তোমাকেই সাজে, মান করা তোমাকেই শোভে ।

কী আর বলতে পারি বঞ্চিত এই আমরা! ভগবানের লীলা যে চির রহস্যঘেরা! কে জানে কখন কাকে সিক্ত করে তার করুণাধারা ৷ তাই তো আহমদী নূরের সওগাতে ধন্য হলে তুমি! মুহাম্মদী নবুয়তের অরুণালোকে স্নাত হলো তোমার বালুভূমি। অথচ বঞ্চিত হলো স্বর্ণপ্রসবা ভারতভূমি! গঙ্গা-হিমালয়ের এই ভারতভূমি!

অজেয় হিমালয়ের তুষারশুভ্র হে গর্বিত চূড়া! তুমিই বলো না, কতশত ঋষির ধ্যানমগ্ন রজনী প্রভাত হয়েছে তোমার কোলে! কত সাধু, কত সাধক সিদ্ধি লাভ করেছে তোমার প্রেম-সরোবরে অবগাহন করে, তোমার হিম শীতল চরণে প্রাণ উৎসর্গ করে! কিন্তু বলো, সত্যি করে বলো; মরু মক্কার এতীম দুলালের সেই মোহিনী রূপ কখনো দেখেছো তুমি! প্রিয় মদীনার প্রিয়তমের সেই নূরানী দীপ্তি কোথাও নজরে পড়েছে তোমার! তাই বলি, কী আছে তোমার মাথা উচিয়ে গর্ব করার!

মহাকালের স্রোত প্রবাহের নিরব সাক্ষী হে গঙ্গা! তোমার তরঙছন্দে বিমুগ্ধ কত ভক্ত পূজারী গঙ্গামন্ত্রযোগে প্রণাম করেছে তোমাকে ৷ তাদের প্রেমতপ্ত হৃদয় শান্ত শীতল হয়েছে তোমারই পবিত্র জলে । কিন্তু বলো, সত্যি করে বলো; মরু মক্কার আবে-জমজম অধিপতি একবারও কি দাড়িয়েছিলেন তোমার তীরে এসে! আঁজলা ভরে জল কি পান করেছিলেন তোমার বুকে নেমে!

হে দিল্লীভূমি! সেই “আকবরের দেখা কি পেয়েছিলে তুমি! হে ময়ূর সিংহাসন! তোমাকে ধন্য করেছিলো সেই ‘শাহজাহানের পদধূলি! (চলবে ইনশাআল্লাহ ……….)

Exit mobile version