আরব্য রজনীর নতুন অধ্যায় PDF

আরব্য রজনীর নতুন অধ্যায় PDF
সাইয়্যেদ সেলিম শেহজাদ

লেখকের ভূমিকা
আমি কখনোই ভালোভাবে ফান্ড করা কোনো আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার হয়ে কাজ করিনি। মূলধারার জাতীয় কোনো মিডিয়াতেও আমি কাজ করিনি। সবসময়ই আমার সম্পর্ক ছিল বিকল্প ধারার মিডিয়ার (Alternative Media) সাথে। ফলে কখনোই আমার হাতে অনেক অনেক অপশন থাকতো না। বরং খুবই সংকীর্ণ পরিসরে আমাকে কাজ করতে হতো। রাজনৈতিক ময়দানের গুরুত্বপূর্ণ ও বৃহৎ ব্যক্তিত্বরা তাদের মিডিয়া ক্যাম্পেইন পরিচালনার জন্য ভালো ফান্ডিং সম্বলিত মূলধারার সংবাদ সংস্থাগুলোকে কাজে লাগিয়ে থাকে। দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য সাধারণ মিডিয়ার তুলনায় ভিন্নধর্মী মিডিয়ার লোকদেরকে দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে হয়।

আরব্য রজনীর নতুন অধ্যায় PDF
সাইয়্যেদ সেলিম শেহজাদ
লেখকের ভূমিকা
আমি কখনোই ভালোভাবে ফান্ড করা কোনো আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার হয়ে কাজ করিনি। মূলধারার জাতীয় কোনো মিডিয়াতেও আমি কাজ করিনি। সবসময়ই আমার সম্পর্ক ছিল বিকল্প ধারার মিডিয়ার (Alternative Media) সাথে। ফলে কখনোই আমার হাতে অনেক অনেক অপশন থাকতো না। বরং খুবই সংকীর্ণ পরিসরে আমাকে কাজ করতে হতো। রাজনৈতিক ময়দানের গুরুত্বপূর্ণ ও বৃহৎ ব্যক্তিত্বরা তাদের মিডিয়া ক্যাম্পেইন পরিচালনার জন্য ভালো ফান্ডিং সম্বলিত মূলধারার সংবাদ সংস্থাগুলোকে কাজে লাগিয়ে থাকে। দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য সাধারণ মিডিয়ার তুলনায় ভিন্নধর্মী মিডিয়ার লোকদেরকে দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে হয়।
তবে ভিন্নধর্মী মিডিয়ার জন্য স্বাধীনভাবে রিপোর্ট করাই আমার মন-মেজাজের সাথে যায়। কারণ কাজের এই ধরনটি ‘প্রচলিত ধ্যানধারণার’ বাইরে এসে সত্য উদঘাটন করতে উৎসাহিত করে। ফলে আমি অপেক্ষাকৃত নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে মানুষকে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হই। উদাহরণস্বরূপ, আমি আল-কায়েদার সুপরিচিত পরিমণ্ডলের ব্যক্তিদের নিয়ে পুনরাবৃত্তিমূলক চিন্তার বদলে আল-কায়েদার সাংগঠনিক কাঠামোর নিচের ধাপে অবস্থিত লোকদের দিকে মনোযোগ দিতে পারি। বিশ্ব সম্পর্কে তাদের চিন্তা-ভাবনা, তাদের জীবন, পর্দার আড়ালে তাদের অবদান – যেগুলো বাস্তবে একটি আন্দোলনের ভাগ্য নির্ধারণ করে চলেছে, তা অন্যদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করি। সেই স্বল্প পরিচিত মানুষদের যাদের ব্যাপারে আমি গবেষণা করেছি এবং যাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি, তাদের মধ্যে রয়েছেন কমান্ডার মুহাম্মাদ ইলিয়াস কাশ্মীরি, সিরাজউদ্দিন হাক্কানি এবং কারী জিয়াউর রহমান। (তাঁরা প্রত্যেকেই পরবর্তীতে আন্দোলনের প্রকৃত নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।)
উসামা বিন লাদেনকে আজকের দুনিয়া চেনে এমন এক ব্যক্তি হিসেবে, যিনি পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু করেছিলেন; আর আল-কায়েদা হলো সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী এই আন্দোলনের কার্যকরী প্রতিরূপ। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিন লাদেন ছাড়াও আল-কায়েদার আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র রয়েছে। আল-কায়েদার এই কাহিনীতে ঠিক সেই পরিমাণ চরিত্র, ব্যক্তি এবং চমক রয়েছে যা রানী শেহেরজাদে তার স্বামী বাদশাহ শাহরিয়ারকে কিংবদন্তীতুল্য রূপকথা ‘আলিফ লায়লা’-এর গল্পে বর্ণনা করেছিল। এই কাহিনীগুলোতে এমন অনেক স্বল্প পরিচিত চরিত্রের আবির্ভাব ঘটে, যারা নিজেদের সময়কার দুনিয়াকে প্রভাবিত করেছিল ঐ ধরনের ভালোবাসা অথবা বিশ্বস্ততা দ্বারা, যেগুলোকে আজও মানবতার নির্যাস হিসেবে গণ্য করা হয়।
আলিফ-লায়লা তথা আরব্য রজনী হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে প্রচলিত অনেকগুলো গল্প ও লোককাহিনী, যা ইসলামি স্বর্ণযুগে আরবিতে সংকলিত হয়েছিল। এই গল্পগুলোর লেখক এবং সময়কাল সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে জানা যায় না। চরিত্রহীনা প্রথম স্ত্রীর প্রতারণার স্বীকার হওয়ার পর রাজা শাহরিয়ার ছলনাময়ী নারীত্বকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রতিদিন একজন নতুন নারীকে বিয়ে ও বাসর রাতে তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। শাহরিয়ারের সেই প্রতিশোধস্পৃহায় আরব্য রজনীর গল্পগুলো একসূত্রে গাঁথা। চতুর শেহেরজাদে, যাকে ভারতীয় বংশদ্ভূত বলে ধারণা করা হয় – সেটার সমাপ্তি ঘটিয়েছিল। এক হাজার এক রাতব্যাপী বিস্তৃত গল্পের মাধ্যমে সে শাহরিয়ারকে বিমোহিত করে রেখেছিল যাতে করে মৃত্যু এড়ানো যায়, এবং রাজার মনে নারী জাতির প্রতি বিশ্বাস ফিরে আসে।
শেহেরজাদের এই গল্পগাঁথা জুড়ে ছিল ভারত, ইরাক, ইরান, মিশর, তুর্কি এবং খুব সম্ভবত গ্রিসের বিভিন্ন গল্প। ধারণা করা হয় যে, সেই গল্পগুলো প্রাথমিকভাবে মুখেমুখে প্রচারিত হয়েছিল, এবং ধীরে ধীরে শতাব্দীজুড়ে সেগুলো এক সমন্বিত রূপ লাভ করে। গল্পগুলোর মতোই এই সংকলনের ইতিহাসও দীর্ঘ, জটিল এবং আঁকাবাঁকা। আর এই গল্পগুলোও জটিল আর চমকপ্রদ বর্ণনে পাঠককে এমন এক মনোমুগ্ধকর কাহিনীর ঘোরপাকে নিয়ে যায়, যা থেকে সহজে মুক্তি মেলে না। আমি চেষ্টা করেছি আল-কায়েদার নিজস্ব আরব্য রজনীর গল্পের কিংবদন্তীতুল্য কিছু চরিত্রের পেছনের রহস্য উন্মোচন করে সমান্তরালভাবে উস্থাপন করার। এগুলো হচ্ছে সেই সব চরিত্রের গল্প, যারা পর্দার আড়ালে কাজ করেছেন। আবার একই সময়ে তারা এমন একটি প্রেক্ষাপট তৈরিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, যার ফলে ২০০১-এ আমেরিকায় হামলার পর যাদের ব্যাপারে ধারণা করা হচ্ছিল যে তোরা-বোরা পাহাড়ের ধ্বংসস্তুপের নিচে তারা চাপা পড়ে গেছে, মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই কিনা সেই আল-কায়েদা উত্তর আফ্রিকা থেকে মধ্যএশিয়া পর্যন্ত তাদের ডানা বিস্তৃত করেছে; পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে একটি বাস্তবমুখী এবং বৈশ্বিক প্রতিরোধ আন্দোলন হিসেবে আবির্ভূত হতে সক্ষম হয়েছে।
আল-কায়েদার বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের সাথে দেখা করবার জন্য আমি ইরাক, লেবানন, উত্তর ওয়াজিরিস্তান এবং আফগানিস্তান ভ্রমণ করেছি। কিন্তু বিস্ময়করভাবে আমার প্রকৃত অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে খুবই স্বল্প পরিচিত একজন মানুষ। পাকিস্তানের এলিট কমান্ডোদের একজন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপের (SSG) সদস্য রিটায়ার্ড ক্যাপ্টেন খুররম আশিক । যখন আমি তাঁর সাথে দেখা করি, ততদিনে ক্যাপ্টেন খুররম সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে আফগানিস্তানে তালেবানের সাথে যোগ দিয়েছেন।
আল-কায়েদাতে খুররামের অবদান ভোলার মতো ছিল না। তাঁর মৃত্যুতে তাঁর বন্ধু রিটায়ার্ড মেজর আবদুর রহমান এবং তাঁর ভাই রিটায়ার্ড মেজর হারুণ, আমার সাথে দেখা করেন এবং আল-কায়েদার যুদ্ধকৌশল সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি ও ধারণাকে আরও বিস্তৃত করেন। দুই রিটায়ার্ড মেজর আবদুর রহমান এবং মেজর হারুণ পরবর্তীতে ২৬ নভেম্বর, ২০০৮-এর মুম্বাই হামলার (যে হামলাকে ২৬/১১ বলা হয়) প্রধান দুই মাস্টারমাইন্ডে পরিণত হন এবং পশ্চিমাদের মিত্রশক্তির বিরুদ্ধে আল-কায়েদার যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেন।
তাঁদের সাথে দেখা হওয়ার পর সম্পূর্ণ নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গিতে আমি আল-কায়েদার দুনিয়াকে দেখা শুরু করি – এক অতুলনীয় কর্মশক্তি যা কেবল বিশ্বাসের দৃঢ়তা এবং উদ্ভাবনী দক্ষতার মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে জটিল, উন্নত এবং শক্তিশালী প্রযুক্তির আমেরিকাকে (বিশ্বের একমাত্র সুপার পাওয়ার) ৯/১১-এর মাধ্যমে উস্কে দিয়েছিল। তাদের এই চালের উদ্দেশ্য ছিল আমেরিকাকে এমন এক অঞ্চলে যুদ্ধে টেনে আনা, যেখানকার মানুষেরা রীতিমত প্রস্তর যুগে বসবাস করতো – এমন এক যুগ, যেখানে উন্নত প্রযুক্তির কোনোই মূল্য নেই, যেখানে শুধুমাত্র বেঁচে থাকার সহজাত জ্ঞানটুকুই বিদ্যমান। তাই এটি বিস্ময়কর নয় যে, এই যুদ্ধের শুরুর দিকে আল-কায়েদার অনুগত শত শত যোদ্ধা নিহত হয়েছিল; আর বেঁচে যাওয়া যোদ্ধারা দ্রুত পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিয়েছিল; বাধ্য হয়েছিল আমেরিকার বিজয় পর্যবেক্ষণে। যখন স্থানীয় তালেবান যোদ্ধারা বিদেশি আগ্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছিল, তখন আল-কায়েদা খুব গভীরভাবে পরিস্থিত পর্যবেক্ষণ করলেও প্রাথমিকভাবে লড়াই থেকে ছিল বিরত। বরং তারা প্রতিনিয়ত ব্যস্ত ছিল অন্য এক কাজে, আর তা হলো এই স্থানীয়দেরকে রক্তের ভাইয়ে পরিণত করা, এবং আল-কায়েদার আদর্শে উদ্বুদ্ধ করা। আল-কায়েদার প্রথম লক্ষ্য ছিল আফগানিস্তানের মাটিতে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করা। পরবর্তী লক্ষ্য ছিল যুদ্ধকে মধ্যএশিয়া থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত করা, যাতে মধ্যপ্রাচ্যের চূড়ান্ত যুদ্ধে যাবার আগেই (বিশ্বের বাকি থাকা একমাত্র) সুপার পাওয়ারের শক্তি সামর্থ্য ও সম্পদকে নিঃশেষ করে দেওয়া যায়; যাতে পরবর্তীতে খিলাফাতের অধীনে মুসলিম রাজনৈতিক ক্ষমতা সুসংগত করা যায়, যা পরবর্তীতে সকল মুসলিম ভূমিগুলোকে স্বাধীনতার দিকে পরিচালিত করবে। এই বইটি এমনই এক সংকটপূর্ণ সন্ধিক্ষণে লেখা হয়েছে, যখন আফগানিস্তানে পশ্চিমা মিত্রশক্তির পরাজয় অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি সময়ে অনেক বক্তাই পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত এবং মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সমর্থনপুষ্ট এক আল-কায়েদার ছবি এঁকে, বিশ্ববাসীর জন্য একে হুমকি হিসেবে চিত্রায়িত করেছিলেন। কিন্তু বহু বছরের যুদ্ধের পর যা সবকিছুকে ছাপিয়ে উঠেছে, তা হলো কারও সমর্থন কিংবা অস্ত্রশস্ত্রই আল-কায়েদার সাফল্যের চাবি ছিল না। বরং আল-কায়েদার সাফল্যের চাবি ছিল – চলমান ঘটনাপ্রবাহকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে উন্নত-প্রযুক্তিসম্পন্ন শত্রুকে বিপর্যস্ত করার ভয়ঙ্কর এক কৌশলি ক্ষমতা। পশ্চিমা মিত্রশক্তি এখন আফগান যুদ্ধের ময়দান থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজছে। কিন্তু কখনও যদি পশ্চিমা মিত্রশক্তি তা করতে সক্ষম হয়ও, তবুও এর মাধ্যমে পশ্চিমের বিরুদ্ধে আল-কায়েদার যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাবে না। বরং এটা যুদ্ধের কেবলমাত্র একটি পর্বের সমাপ্তির সংকেত দেবে, এবং আরেকটি পর্বের সূচনা করবে। আর এই দৃষ্টিভঙ্গিটিই আমি পুরো বইটি জুড়ে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি।

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “আরব্য রজনীর নতুন অধ্যায় PDF”

Your email address will not be published. Required fields are marked *