তিনটি সেনা অভ্যূত্থান ও কিছু না বলা কথা ।
লেখকঃ লে. কর্ণেল এম এ হামিদ, পিএসসি
পঁচাত্তর নিয়ে এ পর্যন্ত লেখা বইগুলো মধ্যে এই বইটা সম্ভবত তার মধ্যে সেরা।
বইটা বোঝার জন্য আগে লেখকের পরিচিতিটা সংক্ষেপে বলে নিই। অন্যরা যখন লোকমুখে শোনা কথা’র উপর ভিত্তি করে লেখে বা রাজনৈতিক বয়ান নিয়ে হাজির হয় তখন সেখানে এই বইয়ের লেখক নিজেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, কখনো কখনো ঘটনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। তাই তার বলা কথা আর পেশাদার লেখক বা রাজনীতিকের বয়ান এক পাল্লায় মাপা যায় না।
লেখক লে. কর্নেল এম.এ হামিদ ব্যক্তি জীবনে ছিলেন প্রখ্যাত দাবারু রানী হামিদের স্বামী এবং দেশ বরেণ্য ফুটবলার কায়সার হামিদের পিতা।
সেনা বাহিনীতে তিনি ছিলেন লে. জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং মেজর জেনারেল শফিউল্লাহ’র কোর্সমেট। উভয়ের বন্ধু এবং উভয়ের সাথে তুই তোকারির সম্পর্ক। পচাঁত্তরের আগস্ট থেকে নভেম্বরের রক্তাক্ত দিনগুলোতে তিনি ছিলেন ঢাকার স্টেশন কমান্ডার। নিজে চোখে দেখেছেন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তিনটি সেনা অভ্যূত্থান। ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড নিয়ে নিজে বিস্তারিত কথা বলেছেন জেনারেল জিয়া, জেনারেল শফিউল্লাহ, ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ, কর্নেল সাফায়ত জামিলের সাথে। কথা বলেছেন অপারেশন কমান্ডার ডালিম, ফারুক, রশিদ, হুদা প্রমুখের সাথে।
বইয়ে কি আছে?
১৫ আগস্টের ঘটনার পরিকল্পনা কবে থেকে শুরু, এর নেপথ্যে কে কে ছিলো, কখন, কিভাবে অপারেশন হলো এর খুটিনাটি এই বইয়ে আছে। আছে ৩ নভেম্বর এবং ৭ নভেম্বরের বিস্তারিত বর্ণনা।
ঘটনাগুলো এমনভাবে বর্ণনা করেছেন যে পড়ার সময় আপনার কখনো মনে হতেই পারে, এই বুঝি একটা বুলেট আপনার কানের পাশ দিয়ে ছুটে গেলো!
১৫ আগস্ট দিবাগত রাতে (অর্থাৎ ১৬ তারিখ প্রথম প্রহরে) তাকে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো নিহত সকলকে বনানী কবরস্থানে দাফন করতে হবে, আর কাজটা করতে হবে ওই রাতের মধ্যেই। হাতে মাত্র কয়েক ঘন্টা। ছুটে গেলেন ধানমন্ডিতে। ইতিমধ্যে সব মৃতদেহকে কফিনবন্দী করে বনানীর উদ্দেশ্যে ট্রাকে তোলা হয়েছে। শুধুমাত্র একটা কফিন বারান্দায় রাখা হয়েছে টুঙ্গিপাড়া নেয়ার জন্য। সৈনিকরা নিশ্চিত করলেন বারান্দায় রাখা কফিনেই আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।
কর্ণেল হামিদ দিনের বেলায় একবার ঘটনাস্থান পরিদর্শন করে গিয়েছিলেন, তবুও রাতে মরহুম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবের লাশ নিজ চোখে দেখতে চাইলেন। তার নির্দেশে কফিন খোলার পরে দেখা গেলো সেটা শেখ নাসেরের লাশ! অর্থাৎ কফিন বদলে গেছে। এবার ট্রাকে রাখা সব কফিন এক এক খুলে সব লাশ নিজে সনাক্ত করে সেগুলোর গায়ে নাম লিখে দিলেন, আর একটা কাগজে তালিকা তৈরি করলেন (ছবি দ্রষ্টব্য)। অত:পর নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সব লাশ দাফন করলেন বনানীতে।
১৫ আগস্টে ৪৬ ব্রিগেড অফিসে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের প্রতিক্রিয়া ও কার্যকলাপ কি ছিলো সেটা এই বইয়ে বিস্তারিত আছে।
৭ নভেম্বরে নিহত ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের লাশ নিতে ক্যান্টনমেন্টে আসার সাহস পায়নি পরিবারের কেউ। এই কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধার লাশ ফেলে রাখা হয়েছিলো সিএমএইচের সামনে। তাকেও সমাহিত করেছিলেন কর্নেল হামিদ।
জিয়াউর রহমানের সাথে সম্পর্কের অবনতি এবং ভুল বোঝাবুঝির এক পর্যায়ে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন।
বইটি বারুদ নিয়ে। বইটিতে বারুদ আছে। আমার অনেক প্রশ্নের জবাব মিলেছে। কর্ণেল তাহের, তার বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা, অফিসার হত্যা এবং ৭ নভেম্বর সম্পর্কে অনেক পূঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা আছে।
পড়ে দেখতে পারেন।