তোমাকে ভালোবাসি হে নবী, আবু তাহের মেসবাহ
লেখকের নাম শুনেই বুঝা যাচ্ছে উনি মুসলিম না বরং ভিন্ন ধর্মের কেউ! ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও লেখকের বিশদ পরিচয় খুজে পাই নি কোথাও, বই থেকে শুধু জানলাম উনি পেশায় এডভোকেট, এবং একই সাথে লন্ডনে ‘ইন্ডিয়া’ নামক পত্রিকার সম্পাদক। তবে মূল বই ‘রাসূলে আরাবী’র প্রথম পৃষ্ঠায় লেখকের পরিচয় দেয়া হয়েছে এভাবে- ‘ইসলামের নবীর প্রতি অনুরাগী’ একজন শিখ গুরুদত্ত সিং এর কলমে রচিত। যা লেখকের প্রতি একধরনের ভালোবাসা তৈরি করতে যথেষ্ট।
একজন অমুসলিমের চোখে সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) কে দেখতে হাতে নিলাম বইটি। অনুবাদ করেছেন খুব প্রিয় একজন লেখক, যার লেখা একটা বই পড়েই উনার লেখার ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম, ইসলামি সাহিত্য জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র মাওলানা আবু তাহের মিছবাহ। তাই অনুবাদ নিয়ে কোন সন্দেহ ছিল না।
পাতা উল্টাতেই চোখে পড়লো বিশ্বের সর্ববৃহৎ সীরাতগ্রন্থ প্রণেতা জ্ঞানতাপস আল্লামা সৈয়দ সোলায়মান নদভী (রঃ) এর বইটি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ও সারগর্ভ প্রশংসা মন্তব্য। যা পড়ে বইটির প্রতি আগ্রহ বেড়ে গেল কয়েকগুণ।
পাঁচটি অধ্যায়ে সমাপ্ত এ বইটির প্রথম অধ্যায়ের নাম দেয়া হয়েছে ‘হৃদয়ের আকুতি’। যেখানে তিনি আরবের সৌভাগ্য ও ভারতমাতার দূর্ভাগ্যের করুন কাব্য কলমের কালিতে প্রকাশ করেছেন। যে মহামানবের পরশমণির সংস্পর্শে আরব জাতি হয়ে গেল পথ প্রদর্শক, লেখক সেই মহামানবের সাথে বাস্তব দর্শন লাভে বঞ্চিত হলেও স্বপ্নযোগে দীদার লাভের আকুতি জানিয়েছেন। লেখকের ভাষায়-
“প্রিয়তম! তোমার দর্শন সৌভাগ্য লাভে না হয় বঞ্চিত হলাম, তাই বলে স্বপ্নের বাতায়ন পথেও কি একবার নসীব হতে পারে না তোমার দীদার!”
এরপরের চারটি অধ্যায়ে নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর জন্মগ্রহন হতে শুরু করে বিদায় হজ্জ ও চিরবিদায়ের মুহূর্ত পর্যন্ত জীবনী সংক্ষেপে উঠে এসেছে লেখকের আবেগ উচ্ছ্বাসের স্রোতে প্রবাহিত কলমের কালিতে। লেখার প্রতিটি অক্ষর যেন প্রেম ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছে বারবার।
নবীর প্রতি ভালোবাসার আবেগ যেমন দেখা গেছে, তেমনি ভাষা ও সাহিত্যের ছন্দময় প্রকাশও দেখা গেছে সমভাবে। যা পাঠককে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে নবীপ্রেমের স্রোতধারায়, নতুন করে প্রিয় নবীকে চিনতে সাহায্য করবে।
বইটা পড়তে গিয়ে মনে হবে, একজন অমুসলিম যদি আমাদের নবীকে এমনভাবে ভক্তি শ্রদ্ধার অর্ঘ্য নিবেদন করতে পারে, এমন করে ভালোবাসতে পারে, তাহলে আমাদের কেমন হওয়া উচিত ছিল? নিজের কাছে প্রশ্ন করে উত্তর খুজে পাই না, লজ্জায় মাথা নত হয়ে আসে, অশ্রুসিক্ত হতে হয়।
অনুবাদকের মত আমার মনেও একটি প্রশ্ন জেগেছে বারবার- যিনি নবী প্রেমের এমন উপঢৌকন দরবারে নববীতে পেশ করতে পারেন তিনি কী করে অমুসলিম থাকেন! নাকি শেষ মুহূর্তে কিংবা গোপনে তিনি ইসলাম গ্রহন করেছিলেন? তাই যেন হয়!
ইসলামি বইয়ের রিভিউ লিখিনি কখনো, এটা ঠিক রিভিউ হয়েছে কি না তাও বুঝতে পারছি না। কিন্তু নিজের ভেতর থাকে বারবার একটা তাগিদ অনু্ভব করছিলাম এ বইটা নিয়ে কিছু লেখার জন্য। সে তাগিদ থেকেই এ লেখার অবতারণা।
সবশেষে, সবাইকে পড়ার অনুরোধ রইলো নবী প্রেম উদ্বেলিত গতিময় ভাষায় রচিত এই বইটি।
আমাদের আরো বই পড়ুন: বাংলা কিতাব
আমাদের ফেসবুকে পেইজ: কিতাব ভুবন
মাহমুদ –
আবু তাহের মেসবাহ সাহেবের ‘আল মানার’ আরবী বাংলা লোগাতটির পিডিএফ হবে?