ইলসামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
জন্ম পরিচয় : নাম নুমান, উপনাম : আবু হানিফা, উপাধি : ইমাম আজম, পিতা : ছাবিত ইবনে জোতি। মুজতাহিদ ইমামদের মধ্যে তাঁর জন্মই সর্বপ্রথম। বংশ হিসেবে তিনি ইরানি ও পারস্য দেশের অধিবাসী ছিলেন। প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী ৮০ হিজরিতে কুফা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আলী (রা.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে তাঁর দোয়া লাভ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। (তারিখে বাগদাদ)
শিক্ষা-দিক্ষা : প্রথমত তিনি কুফা শহরেই ইলমে কালাম শিক্ষা করেন। ২০ বছর বয়সে তিনি ইলমে দ্বীন শিক্ষার প্রতি মনোনিবেশ করেন। ইলমে আদব ও ইলমে কালাম শেখার পর তিনি ইলমে ফিকহ অর্জনের জন্য সমকালীন ফকিহ ইমাম হাম্মাদ (রহ.)-এর শিক্ষাগারে অংশগ্রহণ করেন। ইমাম হাম্মাদ (রহ.) ছিলেন তাঁর বিশেষ ওস্তাদ। তিনি ছাড়াও তাঁর গুরুজনের সংখ্যা ছিল প্রায় চার হাজার।
সাহাবিদের দর্শন : উম্মতের সর্বসম্মতিক্রমে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) একজন তাবেই ছিলেন। আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী (রহ.) বলেন, ‘ইমাম আবু হানিফা (রহ.) নিম্নে উল্লেখিত সাহাবিদের সাক্ষাৎ লাভ করেন :
হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) (ওফাত: ৯৩ হিজরি), আবদুল্লাহ ইবনে আবী আওফা (রা.) (ওফাত: ৮৭ হিজরি), সহল ইবনে সা’আদ (রা.) (ওফাত: ৮৮ হিজরি), আবু তোফায়েল (রা.) (ওফাত: ১১০ হিজরি), আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়দি (রা.) (ওফাত: ৯৯ হিজরি), জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) (ওফাত: ৯৪ হিজরি) এবং ওয়াসেনা ইবনুল আসকা (রা.) (ওফাত: ৮৫ হিজরি)।’
ফিকহ শাস্ত্রে অবদান : ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ফিকহ শাস্ত্রের আবিষ্কারক ছিলেন। ফিকহ ও ইসলামী আইন সংকলন ও সম্পাদনার জন্য তিনি ৪০ জন ফকিহ নিয়ে এক আইনজ্ঞ কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেন। ওই যুগে যেসব মাসয়ালা-মাসায়িল সংকলন হয়েছিল, তার সংখ্যা ১২ লাখ ৭০ হাজারের ঊর্ধ্বে। ফিকহ শাস্ত্রে তাঁর অবদানের ব্যাপারে ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেন, ‘ফিকহ শাস্ত্রের সব মানুষ ছিলেন আবু হানিফার (রহ.) পরিবারভুক্ত।’ (আছারুল ফিকহিল ইসলামী)।
ইমাম মালেক (রহ.) বলেন, ‘আবু হানিফা (রহ.) এমন এক ব্যক্তি, তিনি যদি ইচ্ছা করতেন, এই স্তম্ভটিকে সোনা প্রমাণিত করবেন, তবে নিঃসন্দেহে তিনি তা করতে সক্ষম।’ (জামিউ বয়ানিল ইলম) ।
তাই ইমাম আবু হানিফার (রহ.) নামযুক্ত মাসয়ালাগুলো ও মাযহাব দ্রুত সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে।
হাদিস শাস্ত্রে অবদান : ইমাম আবু হানিফা (রহ.) হাদিস শাস্ত্রে অতুলনীয় জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। ছিলেন হাদিস শাস্ত্রবিশারদ তিনি চার হাজার শাইখ থেকে হাদিস সংগ্রহ করেছেন। (আস সুন্নাহ, উকূদুল জামান)।
ইমাম বোখারির অন্যতম ওস্তাদ মক্কী বিন ইব্রাহীম (রহ.), যাঁর সনদে ইমাম বুখারি (রহ.) বেশির ভাগ ‘সুলাসিয়াত’ হাদিস বর্ণনা করেছেন। এই মক্কী বিন ইব্রাহীম ইমাম হানিফা (রহ.)-এর ছাত্র। তিনি ইমাম আবু হানিফা (রহ.) সম্পর্কে বলেন, ‘আবু হানিফা তাঁর সময়কালের শ্রেষ্ঠ আলেম ছিলেন।’ (মানাকেবে ইমাম আজম রহ.) ।
আবিদ ইবনি সালিহ বলেন, ‘ইমাম আবু হানিফা (রহ.) হাদিসের নাসিখ ও মানসুখ নির্ণয়ের ব্যাপারে খুব সতর্ক ছিলেন।’ ইমাম আবু হানিফা (রহ.) তাঁর শহরে যেসব হাদিস পৌঁছেছে তার মধ্যে রাসুল (সা.)-এর তিরোধানের সময়কার সর্বশেষ আমল কী ছিল সেসব তাঁর মুখস্থ ছিল।
ইয়াহিয়া ইবনে নাসর বলেন, ‘একদিন আমি ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর ঘরে প্রবেশ করি। সেখানে তাঁর কিতাব ভরপুর ছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম এগুলো কী? তিনি বললেন, এগুলো সব হাদিসের কিতাব, যার মধ্যে আমি সামান্য কিছু বর্ণনা করেছি, সেগুলো ফলপ্রদ- (আস সুন্নাহ, উকদু জাওয়াহিরিল মুনীকাহ)
বিদায় : প্রধান বিচারপতি হওয়ার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করায় খলিফা মানসুর ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-কে ১৪৬ হিজরিতে জেলখানায় আবদ্ধ করে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে হত্যা করে।
Reviews
There are no reviews yet.