ইলমুদ্দীন রহ. রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মর্যাদা রক্ষায় জীবন উৎসর্গকারী এক বীর ! – Kitabbhubon

Blog

ইলমুদ্দীন রহ. রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মর্যাদা রক্ষায় জীবন উৎসর্গকারী এক বীর !

ইলমুদ্দীন রহ.

১৯২০ সালে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ায় রাসুলুল্লাহ (সা)কে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে একটা বই লেখা হয়। নাম ‘রঙিলা রাসুল’। পন্ডিত চম্পুতি লাল ছদ্মনামে প্রসাদ প্রতাপ নামে এক ব্যাক্তি বইটি রচনা করে। ১৯২৩ সালে মহেষ রাজপাল নামে লাহোরের এক হিন্দু প্রকাশক লেখকের নাম গোপন করে বইটি প্রকাশের দায়িত্ব নেন।

বইটি প্রকাশিত হলে মুসলমানদের ভেতর ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পরে। বিপুল বিক্ষোভের মুখে লাহোর সেশন কোর্টে মামলা উঠে। কোর্ট তাকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেয়।

রাজপাল লাহোর হাইকোর্টে অ্যাপিল করে। শুনানি অনুষ্ঠিত হয় বিচারক দিলিপ সিং এর অধীনে। Indian Penal Court এর সেকশান ১৫৩ ধারা অনুযায়ী কোন ধর্মীয় নেতার বিরুদ্ধে সমালোচনা শাস্তিযোগ্য ছিলো না, সেই সমালোচনা যত অশ্লীল বা অনৈতিক হোক না কেন। ফলে লাহোর হাইকোর্টে রাজপাল নির্দোষ প্রমানিত হয়। রাজপাল কোন শাস্তি পেলো না৷ উপরন্তু সে পুলিশ পাহাড়া পেলো।

পুরো ঘটনায় উপমহাদেশে মুসলমানরা প্রচন্ড আহত এবং ক্ষুব্ধ হয়। সর্বত্র বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরে। সবাই রাজপালের ফাঁসি দাবি করছিলো। সেসম একজন কাঠমিস্ত্রীর তরুণ পুত্র ইলমুদ্দিন একটা সমাবেশের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি এক মাওলানার জ্বালাময়ী ভাষন শুনে উদ্দিপ্ত হয়ে উঠেন এবং এই অপরাধের প্রতিকারের শপথ নেন।

৬ সেপ্টেম্বর ১৯২৯ সালে বাজারে গিয়ে এক রুপি দিয়ে একটা ছুড়ি কিনেন। ছুড়িটা কাপড়ে লুকিয়ে রেখে রাজপালের দোকানের বিপরীতে গাজি ইলমুদ্দিন দাঁড়িয়ে থাকেন। তিনি রাজপালকে চিনতেন না তাই পথচারীদের তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। রাজপাল এলে একজন তাঁকে বললো যে রাজপাল দোকানে এসেছে। গাজি ইলমুদ্দিন সোজা দোকানে ঢুকে যান এবং রাজপালের বুকে ছুড়ি দিয়ে ফেড়ে ফেলেন। রাজপাল তৎক্ষনাৎ মারা যায়।

ইলমুদ্দিন পালানোর চেষ্টা করেননি। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তারপর মিয়াওয়ালি জেলে পাঠানো হয়। আল্লামা ইকবাল (রহ) এর অনুরোধে জিন্নাহ তাঁর মামলা লড়েন। জিন্নাহ তাঁকে পরামর্শ দেন যে তিনি যেনো আদালতে বলেন প্রচন্ড প্ররোচনার শিকার হয়ে কাজটি তিনি করেছেন। কিন্তু গাজি ইলমুদ্দিন এমন বিবৃতি দিতে অস্বীকার করেন। জিন্নাহ মামলা হেড়ে যান। সেশন কোর্ট তাঁকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করে।

১৯২৯ সালের ৩১ অক্টোবর তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয়। মৃত্যুর আগে তিনি খুবাইব (রা) এর অনুকরণে কেবল দুই রাকায়াত সালাত আদায়ের অনুমতি চান এবং তা আদায় করেন। তাঁর গলায় যখন ফাঁসির রশি পড়ানো হয় তখন তিনি উপস্থিত ব্যাক্তিদের বলেন, তোমরা সাক্ষী থেকো আমি রাজপালকে হত্যা করেছি রাসুলুল্লাহ (সা) এর সম্মান এবং মর্যাদা রক্ষার জন্য। তারা আমাকে ফাঁসি দিচ্ছে। আমি কালিমা পড়তে পড়তে আমার জীবন উৎসর্গ করছি। ইংরেজ ব্যাপক দাঙ্গার আশঙ্কায় ইলমুদ্দিনের লাশ বিনা জানাজায় দাফন করে। আল্লামা ইকবাল দায়িত্ব নেন যে দাঙ্গা হবে না।

১৪ নভেম্বর ১৯২৯ সালে তাঁর লাস লাহোরে আনা হয়। ওয়াজির খান মসজিদের ইমাম মুহাম্মদ শামসুদ্দিন তাঁর জানাজা পড়ান। মাওলানা মুহাম্মদ জাফর আলী খান বলেন, হায় কেবল আমি যদি এই সুউচ্চ মর্যাদা অর্জন করতে পারতাম। আল্লামা ইকবাল গাজি ইলমুদ্দিন (রহ) এর খাটিয়া বহন করেন এবং কবরে তাঁর শরীর মোবারক নামান। এসময় তিনি আবেগে কেঁদে ফেলে বলেন, এই অশিক্ষিত মানুষটা আমাদের শিক্ষিতদের ছাড়িয়ে গিয়েছে। এই ঘটনার সুদূরপ্রসারী ফলাফল ছিলো। এসময় পেনাল কোডে ধর্মীয় ব্যাক্তির অবমাননাকে অপরাধ সাব্যস্ত করে বিধান সংযুক্ত হয়। ১৯৩০ সালে এই ঘটনার পরে আল্লামা ইকবাল মুসলমানদের জন্য আলাদা দেশ দাবি করেন।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকেও নবীর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় নিজের জীবন উৎসর্গ করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>