মুফতী সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ আমীমুল ইহসান বারকাতী রহ. এর কয়েকটি কিতাব – Kitabbhubon

Blog

মুফতী সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ আমীমুল ইহসান বারকাতী রহ. এর কয়েকটি কিতাব

মুফতী সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ আমীমুল ইহসান বারকাতী (রহ.) ১৯১১ সালের ২৪ জানুয়ারি (১৩২৯ হিজরি ২২ মুহাররম) সোমবার বিহার প্রদেশের মুঙ্গের জেলার অন্তর্গত পাঁচনা নামক গ্রামে তাঁর জন্ম।
পিতার নাম সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হাকিম আবদুল মান্নান (রহ.) এবং মা সৈয়দা সাজেদা। তিনি চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন। জন্মের পর তার নাম রাখা হয় ‘মুহাম্মাদ’ এবং লকব আমীমুল ইহসান।

তিনি তাঁর পিতা ও চাচার নিকট থেকে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করেন। মাত্র তিন মাস সময়ের মধ্যে তাঁর চাচা সাইয়্যেদ আব্দুদ দাইয়্যানের (রহ.) নিকট হতে পূর্ণ ত্রিশ পারা কুরআন খতম করেন। এ সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর। তাঁর চাচা তাঁকে ফার্সি ভাষায় বিশেষ জ্ঞান দান করেন। মাত্র দু বছরের ব্যবধানে মুফতী সাহেব হযরত বারকাত আলী শাহ (রহ.)-এর নিকট থেকে আরবি ব্যাকরণের (মীজান মুন্শায়েব) প্রাথমিক জ্ঞান রপ্ত করেন এবং পাশাপাশি উচ্চতর ফার্সি সাহিত্য ও তাজবীদের প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করেন। মাত্র দশ বৎসর বয়সে তিনি হযরত সাইয়্যেদ বারকাত আলী শাহ নিকট কুরআন মাজীদের অনুবাদ, ইলমে সরফ, তফসীর, হেসনে হাসিন ও ফার্সি সাহিত্যের উচ্চতর গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন করেন। ১৯২৬ সালে পনের বছর বয়সে মুফতী সাহেব কলকাতা আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন। তিনি ১৯২৯ সালে আলিম পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন, হাদীস বিষয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে স্বর্ণপদকে ভূষিত হন। ১৯৩১ সালে ফাযিল ও ১৯৩৩ সালে কামিল (হাদীস) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্বর্ণপদক লাভ করেন এবং “মুমতাজুল মুহাদ্দিসিন” উপাধি প্রাপ্ত হন। ১৯৩৪ সালে তিনি তাঁর শ্রদ্ধেয় ওস্তাদ মাওলানা মুফতী মুশতাক আহমেদ কানপুরী (রহ.) সাহেব এর নিকট থেকে ‘মুফতী’ সনদ লাভ করেন। তখন থেকে তিনি ‘মুফতী’ খেতাবে আখ্যায়িত হন।
কর্মজীবন : ১৯২৭ সালে পিতার ইন্তেকালের পর ছোট ভাই বোনের লালন-পালন ও শিক্ষার দায়িত্ব, পিতার চিকিৎসালয় ও পারিবারিক প্রেস পরিচালনা, গৃহ সংলগ্ন (জালুয়াটুলীস্থ) মসজিদের ইমামতির দায়িত্ব তাঁর উপর ন্যস্ত হয়। ১৯৩৪ সালে তাঁকে কলকাতার বৃহত্তর জামে মসজিদ “নাখোদা মসজিদ”-এর সহকারী ইমাম ও মাদরাসার প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োাগ দেয়া হয়। ১৯৩৫ সালে ‘নাখোদা মসজিদ’ এর মাদরাসার দারুল ইফতার প্রধান মুফতীর দায়িত্ব দেয়া হয়। এ সময় তিনি ধর্মীয় ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে প্রায় লক্ষাধিক ফাতওয়া প্রদান করেন। ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত তিনি নাখোদা মসজিদের ও দারুল ইফতার দায়িত্ব প্রশংসনীয়ভাবে পালন করেন। এইজন্য ১৯৩৫ সালে কলকাতা সরকার তাকে একটি বিশেষ সীলমোহর প্রদান করে যাতে লেখা ছিল গ্রান্ড মুফতী অফ কলকাতা। তখন থেকে তিনি মুফতী-এ-আযম উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৩৭ সালে ব্রিটিশ সরকার মুফতী আমীমুল ইহসানকে মধ্য কলকাতার কাজী পদে নিয়োাগ দেন।  ১৯৪৩ সালে মাদরাসা-ই আলিয়ায় অধ্যাপনার কাজে যোগদানের পূর্ব পর্যন্ত তিনি এইসব কাজ যথারীতি পালন করেন। ১৯৪০ সালে তিনি আঞ্জুমানে কুররায়ে বাংলার (বাংলার ক্বারী সমিতি) সভাপতি নিযুক্ত হন।
১৯৪৩ সালে তিনি কলকাতা আলিয়া মাদরাসার শিক্ষকতার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৪৩ সাল থেকে ভারত বিভাগ (১৯৪৭) পর্যন্ত টাইটেল কামিল ক্লাসে হাদীস, তাফসীর, ফিকাহ এবং ফাযিল শ্রেণীতে উর্দু-ফার্সি শিক্ষা দিতেন। ১৯৪৭ সালে আলিয়া মাদরাসা ঢাকায় স্থানান্তরিত হলে তিনি পূর্ব বাংলায় চলে আসেন। ১৯৪৯ সালে তৎকালীন সরকার তাকে ধর্মীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনোনীত করেন। ১৯৫৫ সালে আলিয়া মাদরাসার হেড মাওলানা, মাওলানা জাফর আহমদ উসমানী অবসর গ্রহণের পর মুফতী আমীমুল ইহসান অস্থায়ীভাবে সেই পদে নিয়োগ পান। ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত স্থায়ীভাবে সেই পদে নিযুক্ত ছিলেন। আলিয়া মাদরাসায় কর্মরত অধ্যাপক হিসাবে তিনি ব্যাখ্যাসহ বুখারি শরিফ পড়াতেন। ১৯৬৯ সালের ১ অক্টোবর উক্ত পদ হতে অবসর গ্রহণ করেন।
১৯৫৫ সালে আলিয়া মাদরাসায় হেড মাওলানার পদে উন্নীত হবার পর তৎকালীন ঢাকার প্রধান ঈদগাহ পুরানা পল্টন ময়দানে ঈদের জামাতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং কয়েক বছর পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৪ সালে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম প্রতিষ্ঠার পর তৎকালীন কমিটির চেয়ারম্যান ইয়াহিয় বাওয়ানীর অনুরোধে এবং মসজিদ কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে মসজিদের খতীব এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত এই দায়িত্ব কৃতিত্ব সাথে পালন করেন। তিনি প্রতি শুক্রবার সেখানে জুমার নামাজ পডতেন এবং আরবিতে স্বরচিত খুৎবা পড়তেন। খুৎবার বঙ্গানুবাদ পূর্বেই শ্রোতাদেরকে শোনানো হতো। অভিনব পদ্ধতিতে অনর্গল বিশুদ্ধ আরবি ভাষায় তাঁর খুৎবা প্রদানের অপূর্ব দৃষ্টান্ত ছিল বিরল। আরব দেশ থেকে আগত অনেক উচ্চশিক্ষিত আলেম ও রাষ্ট্রনায়ক তাঁর খুৎবা শুনে আবেগাপ্লুত হতেন।
তিনি ২০০-এর অধিক গ্রন্থ রচনা করেন। নিচে তাঁর উল্লেখযোগ্য কিছু কিতাবের পিডিএফের লিংক তালিকা দেয়া হল। ইসলামের সেবা ও দাওয়াতি কার্যক্রমে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ১৯৮৪ সালে তাকে মরণোত্তর স্বর্ণপদক ও সনদ প্রদান করেন। হযরত মুফতী সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ আমীমুল ইহসান বারকতী ১৯৭৪ সালের ২৭ অক্টোবর (১৩৯৫ হিজরির ১০ শাওয়াল) ইন্তেকাল করেন। ৬০নং তনুগঞ্জ লেনে অবস্থিত কলুটোলা মসজিদের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
মুফতী সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ আমীমুল ইহসান বারকাতী রহ. এর কয়েকটি কিতাব:

আরবী কিতাব:
القواعد الفقهية
مقدمة في اصول الحديث مع حواشي السعدي
التعريفات الفقهية معجم يشرح الألفاظ المصطلح عليها بين الفقهاء والأصوليين وغيرهم من العلماء
فقه السنن والآثار أدلة السادات الأحناف
التنوير في أصول التفسير
উর্দূ কিতাব:
تاریخ علم فقہ
বাংলা অনুবাদ:
তারীখে ইলমে হাদীস
তারীখে ইসলাম

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>