মাওলানা আবদুল মালেক সাহেব সম্পর্কে তার আসাতিয়ায়ে কেরাম ও বিশ্ববরেণ্য ওলামাকেরামের অভিমত: – Kitabbhubon

Blog

মাওলানা আবদুল মালেক সাহেব সম্পর্কে তার আসাতিয়ায়ে কেরাম ও বিশ্ববরেণ্য ওলামাকেরামের অভিমত:

হযরত আবদুল মালেক সাহেব হাফি. শুধু আমাদের দেশের নয় পুরো বিশ্বের ইলমি মহলের জন্য অন্যতম নিয়ামত৷ তাঁর ইলম, আমল, আখলাক সবকিছু আপনাকে মুগ্ধ করবে৷ টেনে নিয়ে যাবে নববি আদর্শের দিকে৷ তিনি ইলমের একজন পোকা বলা যায়৷ জীবনকে উৎসর্গ করেছেন ইলমের জন্য৷ হযরত কত বড় মাপের ইলমি ব্যক্তিত্ব তা নিম্নের কয়েকটি বড়দের বাণী পড়লে বুঝতে সক্ষম হবেন, ইনশাআল্লাহ৷

১৷ বিখ্যাত হাদীস বিশারদ শায়খ আবদুর রশিদ নুমানী রাহ. বলেন, “এমন মেধাবী ছাত্র আমার জীবনে আমি পাইনি।”

হযরত আব্দুর রশীদ নোমানী রাহ. আবদুল মালেক সাহেব হাফি.এর লিখিত “আল মাদখাল ইলা উলুমিল হাদীসিশ শরিফ” দেখে বলেন, “তোমার আলমাদখাল দেখে আমি অনেক আনন্দিত!”

বান্নূরী টাউনে হাদীস পড়ে শেষ করার পর হযরত নুমানী রাহ. একটি চিঠি দিয়ে ফিকহ পড়ার জন্য তাঁকে হযরত শাইখুল ইসলাম মুফতি তাকি উসমানি হাফি.এর হাতে তুলে দেন৷ সে চিঠিতে নুমানী রাহ. লিখেন, “এই ছাত্র কী পরিমাণ যোগ্যতাসম্পন্ন, কত গভীর ইলমের অধিকারী, তাকে পড়ালেই তা বুঝতে পারবেন৷

২৷ তিনি দারুল উলূম করাচিতে অল্প সময়ে শাইখুল ইসলাম হযরত তাকি উসমানি হাফি. এর খুবই আস্থাভাজন একজন ইলমি, আমলি ছাত্র হিসেবে পরিচয় লাভ করেন৷ তাঁর ইলমের প্রতি নিমগ্নতা দেখে শাইখুল ইসলাম হাফি.এর নিকট একজন যখন মেধাবী ছাত্রের সন্ধান চান হযরত আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহ. তখন হযরত তাকি উসমানী হাফি. হযরত আবদুল মালেক সাহেব হাফি.কে নির্বাচন করেন৷ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন এবং পাঠান৷

৩৷ মাওলানা আবদুল মালেক সাহেব হাফি.এর খাছ উস্তাদ আরবের বিখ্যাত হানাফি আলেম, মুহাম্মদ বিন সাউদ ইউনিভার্সিটির হাদীস বিভাগের প্রধান শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহি. বলেন, “এক সময় আলেম-ওলামা মাওলানা আবদুল মালেকের কাছে সফর করে করে আসবে!”

হযরত আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহি. তাঁর পিতার কাছে লিখিত একটি চিঠিতে বলেন, “তিনি (মুহাম্মাদ আবদুল মালেক) দাবি করেন যে, আমার কাছ থেকে তিনি উপকৃত হয়েছেন অথচ আমি দেখি তার থেকে আমিই অনেক উপকৃত হয়েছি৷ সে তার অনেক শিক্ষকদের থেকেও এগিয়ে যাবে, সে সকল শিক্ষকদের মধ্যে আমি হবো প্রথমজন৷

৪৷ হযরত একবার শায়খ মুহাম্মদ আওয়ামা হাফি.এর আসারুল হাদীসিশ শরীফের উপর পর্যালোচনা লিখে পাঠিয়েছিলেন তাঁর কাছে। শায়খ উত্তরে লিখেছেন, তোমার অনেকগুলো মশওয়ারা আমি গ্রহণ করে নিলাম। আর এটা পড়ে আমার মনে হয়েছে তোমাকে নিয়ে শায়খ আবদুল ফাত্তাহ রাহ.এর মেহনত যথাযথ হয়েছে। ফল পেকেছে।

৫৷ দারুল উলূম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিসীন ও শাইখুল হাদীস হযরত সাঈদ আহমদ পালনপুরী রাহ. হযরতের আলমাদখাল দেখে খুবই প্রশংসা করেন৷ হযরত ভূমিকায় লিখেন,

فقد راقني و أعجبني كتاب الأستاذ المجد الموفق الشيخ عبد المالك الكملائي… . …فبارك الله في عمل المصنف و جزاه الله خيرا حيث لفت الاهتمام إلى هذا الموضوع، فإن الناس عنه غافلون في بلادنا، … .

এ ছাড়াও ২০১৮ সালে হযরত আদবুল মালেক সাহেব হাফি. যখন দারুল উলূম দেওবন্দের সফরে হযরত পালনপুরী রাহ.এর সাথে দেখা করতে যান তখন হযরত পালনপুরী রাহ. নিজ কক্ষ থেকে বের হয়ে রাস্তায় এসে হযরতকে ইস্তিকাল করেন৷ যা পালনপুরী রাহ. খুব সহজে কারো জন্য করতেন না৷ খুবই দুর্লভ এমন চিত্র৷

৬৷ বিখ্যাত হাদীস বিশারদ হযরত নুরুদ্দীন ই’তর রাহ. হযরতকে (بني) প্রিয় ছেলে বলে ডাকতেন৷ তাঁর এক কিতাবের শুরুতে হযরত আবদুল মালেক সাহেব হাফি.নিয়ে লম্বা অনুভূতি প্রকাশ করে হাদিয়া পাঠান৷ সেখানে তিনি লেখেন, আমি তোমার সাথে মুলাকাতের আশা রাখি৷ পাশাপাশি হযরতের ব্যক্তিত্বের ভূয়সি প্রশংসা করেন৷

৭৷ হযরত মাওলানা শাহ আহমদ শফি সাহেব রাহ. বলেন, “মাওলানা আবদুল মালেক সাহেব সমকালীন একাধিক প্রখ্যাত আলেম ও হাদীস বিশেষজ্ঞদের সুদীর্ঘ সোহবত লাভে ধন্য হয়েছেন এবং হাদীসশাস্ত্রে তাঁর একাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়ে ওলামায়ে কেরামের নিকট সমাদৃত হয়েছে।”

৮৷ মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ সাহেব হাফি. লিখেন, “মাওলানা আব্দুল মালিক। তাঁর সম্পর্কে এতটুকু বলাই যথেষ্ট যে, তিনি “আব্দুল মালিক”! যারা ইসম অতিক্রম করে ‘মুসাম্মায়’ যেতে চান তাদের বলবো, হাদীস শাস্ত্রের উপর তাঁর গবেষণাগ্রন্থ المد خل إلى علوم الحديث الشريف পড়ুন।

আর যারা মুসাম্মা অতিক্রম করে সনদ ও মুসনাদের ঊর্ধ্বস্তরে যেতে চান তাদের জন্য এতটুকু জানাই যথেষ্ট যে, আরব জাহানের সর্বজনমান্য মুহাদ্দিসগণের অন্যতম ফযীলাতুশ শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহ. এক পত্রে তাঁকে লিখেছেন-

لاتغفلواعن محبكم الذي دخل إلى قلبكم ودخلتم قلبه

তুমি তোমাকে মুহববতকারী এই মানুষটিকে ভুলে যেয়ো না, যে তোমার দিলের ভিতরে দাখেল হয়েছে, আর তুমিও তার দিলে দাখেল হয়েছো (সংক্ষেপিত)।

৯৷ মাওলানা আবুল বাশার সাহেব হাফি. তাওযীহুল কুরআন (বাংলা) ৩য় খণ্ডের ভূমিকায় লিখেন, “মাওলানা আবদুল মালেক সাহেবের দ্বারা অনুরুদ্ধ হয়েই আমি এ গ্রন্থের অনুবাদে হাত দিয়েছি। বস্তুত তার অনুরোধ আমার পক্ষে আদেশ অপেক্ষাও বেশি কিছু এবং আমার জন্য এটা অনেক গৌরবের বিষয়। আল্লাহ তাআলা তাকে সিহহাত ও আফিয়াতের সাথে দীর্ঘজীবী করুন এবং উম্মতের ইলমী ইমামতের জন্য কববুল করে নিন।”

১০৷ জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়ার শায়খ, দেশের বরেণ্য হাদীস বিশারদ, বিশিষ্ট গবেষক আলেম ও বহু গ্রন্থপ্রণেতা মাওলানা আবদুল মতিন হাফি. বলেছেন, “মাওলানা আবদুল মালেক সাহেব শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো পৃথিবীবাসীর জন্য আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত। তিনি এদেশের গর্ব, পৃথিবীর গর্ব।” গত ২৬ অক্টোবর তাবলিগ জামাতের সাথীদের উদ্দেশ্যে এক প্রসঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, “আমরা ঢাকায় কাজী মুতাসিম বিল্লাহ, মাওলানা নূর হুসাইন কাসিমীর মত বড় আলেমদের কাছে পড়েছি। দেওবন্দ গিয়েও বড় বড় আলেমদের সান্নিধ্য লাভ করেছি। তবুও আমরা কেন মাওলানা আবদুল মালেকের ভক্ত? তাঁর কাছে ইলম আছে। তিনি কথা অত্যন্ত ভদ্র ও নম্রভাবে বলেন। কখনো আদবের খেলাফ করেন না। এরকম মানুষ আমরা দেখিনি। সারা বিশ্বের আলেম ওলামা তার কদর করেন।

এ ছাড়াও আকাবিরে দারুল উলূম দেওবন্দ হুজুরকে খুবই কদর করেন৷ হযরত হাবিবুর রহমান আজমী রাহ., নেয়মতুল্লাহ আজমী হাফি., নুরুল হাসান রাশেদ কান্ধলভী হাফি. , হযরত উবায়দুল্লাহ আস’আদী ও খালেদ সাইফুল্লাহ রাহমানী হাফি.সহ সকল মুরব্বিদের প্রশংসাবাণী রয়েছে৷

লিখেছেন: মাওলানা যোবায়ের হানিফ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>