তুরস্কে তুর্কিস্তানের সন্ধানে – Kitabbhubon

Blog

তুরস্কে তুর্কিস্তানের সন্ধানে

বই পরিচিতি

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।

তুরস্ক একসময় তুর্কিস্তান নামে পরিচিত ছিলো । ছিলো সর্বশেষ ইসলামি খেলাফত উসমানি সম্রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র । রাসুল যুগের পর থেকে পৃথিবীতে ইসলামি সালতানাতের খেলাফত ব্যবস্থার যে শাসনকার্যের যাত্রা শুরু হয়েছে, সময়ের বিবর্তনে তার ভাঙাচূরা যতুটুকু অবশিষ্ট ছিলো, তা মদিনার পথ ধরে বাগদাদ হয়ে অবস্থান নেয় তুরস্কের ইস্তাম্বুলে; যাকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত মানুষ চিনতো কুস্তুনতুনিয়্যাহ বা কনস্টান্টিনোপল নামে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন—  অচিরেই অবশ্যই ইস্তাম্বুল জয় হবে । সেই বিজয়ী দলের আমির কতই না উত্তম ।

যদিও সেদিন তুর্কিস্তান তুরস্ক ছিলো না, কুস্তুনতুনিয়্যাহ ছিলো না কনস্টান্টিনোপল বা ইস্তাম্বুল । মুসলিম উম্মাহর হৃদয়কে শ্বাপদের মতো নৃশংসভাবে ছিঁড়েফেঁড়ে খেলাফতের যে প্রোজ্জ্বল-গৌরবময় স্মৃতিকে ধূলায় মিশিয়ে দিয়েছে কামাল পাশা, এই বই সেই ইস্তাম্বুলেরই ভ্রমণকাহিনী । এই কাহিনীর জনক, ভ্রমণের পর্যটক, সুলেখক আবু তাহের মিছবাহ । তার ভ্রমণকাহিনীতে রয়েছে চিন্তা ও চেতনার খোরাক, তবে তাতে ‘চটুল ও চমৎকার কিন্তু সারশূন্য’ বর্ণনা নেই।

সন্দেহ নেই, বাংলাদেশের ইসলামি অঙ্গনে আলেম ও তালিবে ইলমদের মাঝে ইসলামি সাহিত্যের প্রেরণা সৃষ্টি করার জন্য যেসকল নিবেদিত প্রাণ নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তিনি তাদের অন্যতম । ভারতীয় উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠতম ইসলামি চিন্তাবিদ সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভীর চিন্তা এবং প্রখ্যাত ইসলামি শিক্ষাবিদ মাওলানা মনযূর নোমানীর দরদ ও ব্যথা নিয়ে তিনি এই কাহিনী রচনা করেছেন ।

স্মর্তব্য, এই বইতে সমগ্র তুরস্কের ভ্রমণকাহিনী নেই— সেটা  সম্ভবও ছিলো না, যেহেতু লেখক সমগ্র তুরস্ক বেড়ানোর মতো ফুরসত পান নি— তাই এটি কেবলই ইস্তাম্বুলের এশীয় অংশের ভ্রমণকাহিনীই হয়েছে । তবে লেখক ইতিহাস ও আপন কল্পচিত্রের সাহায্যে তুরস্করে পথেঘাটে সবখানে খুঁজে বেড়িয়েছেন মুসলিম উম্মাহর একসময়কার সেই প্রিয় তুর্কিস্তানকে। এটা নিছক কোনো আমোদভ্রমণ ছিলো না লেখকের, বরং শায়খ মুহাম্মদ আওয়ামার ছেলে মুহিউদ্দীন আওয়ামা এবং ইসলামি ফেকাহ একাডেমী ভারতের চেয়ারম্যান খালেদ সাইফুল্লাহ রহমানী কর্তৃক আয়োজিত একটি ইন্টারন্যাশনাল ওলামা কনফারেন্সের অংশ নিয়েছিলেন তিনি। সুতরাং পৃথিবীর সবদেশের শ্রেষ্ঠ ওলামায়ে কেরামের এক মহাসম্মেলন ছিলো সেটা। বাংলাদেশ থেকে সেখানে অংশ নিয়েছিলেন আরও দুইজন ব্যক্তিত্ব—  মারকাযুদ্দাওয়ার পরিচালক আবুল হাসান আব্দুল্লাহ ও শায়খ আব্দুল মতীন ।

তাই মাত্র তিনদিনের এই ভ্রমণকাহিনী লিখেছেন তিনি তিনশো পৃষ্ঠার কলেবরে। আবু তাহের মিছবাহ লেখনী স্টাইলের সবচে’ বড় শক্তি হলো তার নিখুঁত চিত্রকল্প নির্মাণ। তুর্কিস্তানের অনুসন্ধানের পথ ধরে ইতিহাসের সাহায্যে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন মুসলিম সালতানাত তুর্কিস্তানের চিত্রকল্প। ইতিহাস যেমন আছে এতে, তেমনি আছে মুসলিম উম্মাহকে নিয়ে গভীর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন চিন্তা। আছে এদেশের তিন অঙ্গনের তিনজন যুগশ্রেষ্ঠ আলেমের সফরে সুন্নাতি চলনবলন এবং শরয়ী দীক্ষার প্রতিফলন। উসমানি সম্রাজ্যের ভিত্তিপ্রস্তরস্থাপনকারী সুলতান মুহাম্মদ আল ফাতিহকে নিয়ে নির্মিত ডকুমেন্টারির যে বর্ণনা লেখক দিয়েছেন, মনে হবে দৃষ্টির সামনে চলমান দেখছেন দৃশ্যাবলি। তার ঐতিহাসিক কামানের গোলায় কেঁপে উঠবেন। হয়তো নিজের অজান্তে কয়েক ফোঁটা অশ্রুও গড়িয়ে পড়বে । এতো চমৎকার ও জীবন্ত বর্ণনা সম্ভবত এই প্রথম আপনি পাঠ করতে যাচ্ছেন । পশ্চিমা ইতিহাসবিদদের কলমে মহান হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে যে তৈমুর লং, মুসলিম সাম্রাজ্যের অগ্রগতিতে আপন ভাইয়ের পশ্চাতে বারেবারে কামড় বসিয়ে কী পরিমাণ পিছিয়ে দিয়েছে আমাদের ভেবে চোখ ঝাপসা হয়ে আসবে।

উসমানি সম্রাজ্যের যেকোনো ইতিহাসগ্রন্থ পাঠের পূর্বে আমি মনে করি, এই বইপাঠ অত্যন্ত জরুরি। এই বইয়ে ইতিহাসের গৎবাঁধা অজস্র বর্ণনা নেই, কেবল আছে ইতিহাসকে নিংড়ে আনা অনবদ্য ইতিহাস ।

বই                    : তুরস্কে তুর্কিস্তানের সন্ধানে

লেখক               : আবু তাহের মিছবাহ

বিষয়                 :  ইসলামি ইতিহাস ও ঐতিহ্য

প্রকাশনায়          :  দারুলকলম